Thursday, September 3, 2020


শিশুর প্রতি মনোযোগ দেবেন কিভাবে

 

সব শিশুই বড়দের মনোযোগ চায়। আসলে এটা ছাড়া পৃথিবীতে শিশুরা বাঁচতেই পারবে না। বড়রাও শিশুদের কাজকর্ম দেখে আনন্দ পায়। কিন্তু শিশু যখন অতিরিক্ত বা সব সময়ই মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে তখন সেটা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। মনোযোগ না দিলেই সে নানা ধরনের আচরণের মাধ্যমে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। যখনই তার কাছে মনে হয় যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না তখনই সে এমন ঘ্যানঘ্যান করে, অস্পস্ট কথা বলে, কান্না বা চেঁচামেচি করে, কোনো জিনিসে বাড়ি দিয়ে শব্দ করে, জিনিস ভেঙে ফেলে, অন্যকে মারে, টিভির শব্দ বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়, এমনকি নিজের শরীরে আঘাত পর্যন্ত করতে পারে। অনেক শিশু মনোযোগ পাওয়ার জন্য নিজের হাত-পা কাটে, অসুস্থ হওয়ার ভান করে অথবা নিজেকে সত্যিই অসুস্থ করার চেষ্টা করে। একটু কৌশলী হলে শিশুর মনোযোগ কাড়ার এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করানো যায়। আসুন, দেখে নিই শিশুরা কী চায়, কেনই বা তারা মনোযোগ আকর্ষণের নামে নেতিবাচক কাজ করে এবং অভিভাবকরা কী করতে পারেন।

কেন করে?

শিশুরা তাদের মনোযোগের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে। যেভাবেই হোক তাদের মনোযোগ চাই-ই। নবজাতকরা কান্না ও হাসির মাধমে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। শিশু একটু বড় হলে কোনো নেতিবাচক আচরণ (যেমন- কান্না করা, ঘ্যানঘ্যান) করলে সে দেখতে পায় মা-বাবা বা অন্য বড়রা এগুলো এড়াতে পারে না, দ্রুত কাছে চলে আসে। তখন শিশুরা শিখে যায় যে নেতিবাচক আচরণের মাধ্যমে সহজেই বড়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। এরপর শিশুরা প্রায়ই নেতিবাচক উপায়ে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। যেমন- একটি শিশু সুন্দর একটি ছবি এঁকেছে। সে বাবাকে দেখাতে গেলে বাবা বলল, মাকে দেখাও। মা বলল, 'এখন সময় নেই। রান্নায় দেরি হয়ে গেছে। পরে দেখব, যাও।' এরপর শিশুটি অন্য ঘরে গেল এবং দৌড়াতে গিয়ে ধাক্কা লেগে একটি শোপিস পড়ে ভেঙে গেল। মা-বাবা দুজনই ছুটে এসে শিশুটিকে খুব বকা দিতে লাগলেন। শিশুটির কাছে এই 'বকা' শাস্তি নয়। বরং পুরস্কার। কারণ এর মাধ্যমেই সে তার কাছে বহু মূল্যবান মনোযোগটি পাচ্ছে। এই পুরস্কার তার নেতিবাচক আচরণকে বাড়িয়ে দেয়। এভাবে শিশুটির ভুল আচরণে মনোযোগ দেওয়ার ফলে শিশুটির মধ্যে নেতিবাচক আচরণ করার প্রবণতা বেড়ে যায়।

করণীয়

শিশুর মনোযোগ ও স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা কমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। যেটা দরকার সেটা হলো, তার এই মনোযোগের চাহিদাকে সঠিকভাবে পূরণ করা অর্থাৎ সঠিকভাবে মনোযোগ দেওয়া। মা-বাবারা তিনভাবে মনোযোগ দিয়ে থাকেন- ক. সঠিক আচরণে মনোযোগ খ. ভুল আচরণে মনোযোগ এবং গ. খুব কম বা একেবারেই মনোযোগ না দেওয়া। যদি ভুল আচরণে মনোযোগ কমানো হয় এবং একই সঙ্গে সঠিক আচরণগুলোতে মনোযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের মনোযোগের চাহিদা পূরণ হবে। একই সঙ্গে তাদের নেতিবাচক আচরণের মাধ্যমে মনোযোগ নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা নিচের কৌশলগুলো প্রয়োগের মাধম্যে শিশুটিকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারেন।

চাহিদা প্রকাশ করতে শেখান

শিশুর যেটা প্রয়োজন সেটা কেঁদে বা ঘ্যানঘ্যান না করে কিভাবে চাওয়া যেতে পারে তা শেখান। শিশু যখন আপনার কাছে ভালোভাবে চাইবে তখন অবশ্যই তার দিকে সীমিত সময়ের জন্য হলেও মনোযোগ দিতে হবে। এখন বেশি সময় দিতে না পারলে কী কারণে পারছেন না এবং কখন তাকে সময় দেবেন তা বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। তাহলে সে ঘ্যানঘ্যান না করে সঠিকভাবে চাইতে শিখবে।

শিশুকে বুঝুন

শিশুকে এবং প্রয়োজনকে তার মতো করে বোঝার চেষ্টা করুন। অনেক সময় শিশু তার প্রয়োজনকে পরিষ্কার করে বোঝাতে পারে না। তখন সে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নেতিবাচক কাজ করতে থাকে। যেমন- কোনে কোনো শিশুর ক্ষুধা লাগলেও সে বলতে পারে না। তখন সে নানা ধরনের কাজ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। তাই শিশুটির কী প্রয়োজন সেগুলো বুঝে সে কান্না বা ঘ্যানঘ্যান করার আগেই পূরণ করুন।

ইতিবাচক কাজে মনোযোগ দিন

মা-বাবার মনোযোগই শিশুর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার। তাঁর প্রতিটি ভালো আচরণে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। ভালো কাজগুলোতে প্রশংসা করুন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অংশ নিন ও স্বীকৃতি দিন। এতে তাঁর মনোযোগের চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি সে ভালো আচরণগুলো বেশি করার চেষ্টা করবে।

 

নেতিবাচক কাজ উপেক্ষা করুন

প্রায় প্রতিটি শিশু নেতিবাচক উপায়ে মনোযোগ নিতে চেষ্টা করে। যতটুকু সম্ভব তাদের নেতিবাচক আচরণের সময় মনোযোগ না দিয়ে উপেক্ষা করুন। বরং নেতিবাচক আচরণের মধ্যেই কোনো ইতিবাচক আচরণ করলে সেটাতে বেশি করে মনোযোগ দিন। লক্ষ রাখুন, শিশুকে নয়, শিশুর নেতিবাচক আচরণকে উপেক্ষা করতে হবে। নেতিবাচক কিছু করলে সেটা নিষেধ না করে তাকে প্রাসঙ্গিক ইতিবাচক একটি কাজ করতে বলুন।

স্পেশাল কোয়ালিটি টাইম

প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাত্র ১০ মিনিট একান্তই শিশুটির জন্য দিন। শিশুটি যেন আপনার সময় ও মনোযোগ দেওয়াটা বুঝতে পারে। প্রতিদিন আপনি কখন ও কতক্ষণ তাকে সময় দেবেন তা শিশুকে জানিয়ে দিন। সারা দিন বিভিন্নভাবে মনোযোগ দেওয়া হলেও এই সময়টায় সে যেভাবে চাইবে সেভাবেই মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার এই নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ তাঁর মনোযোগের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করবে। ফলে তাঁর নেতিবাচক কাজের মাধ্যমে আপনার মনোযোগ নিতে হবে না।


0 comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.